যশোর কালেক্টরেট স্কুল

যশোর কালেক্টরেট স্কুলের ইতিকথা

যশোর কালেক্টরেট এর কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের শহরের বিভিন্ন নামকরা স্কুলে ভর্তি না করতে পারায় ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক, জনাব মোঃ মহিবুল হক মহোদয়ের কাছে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি উত্থাপন করা হয়। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আন্তরিকতা এবং তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের ০১ জানুয়ারি তারিখে বিদ্যালয়ের বর্তমান স্থানে ৮৭.৭৫ শতাংশ জমির উপর একটি আধা কাঁচা-পাকা ভবনে খুব স্বল্প পরিসরে নার্সারী থেকে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ও আন্তরিকতায় ধীরে ধীরে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম এগিয়ে যায় এবং ২০১২ সালের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হয়। সেই সময় শিক্ষকদের সংখ্যাও ছিল অতি নগন্য। তখন বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মিসেস ফরিদা বেগম। এরপর ধীরে ধীরে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মহোদয়ের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানটি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড কর্তৃক পাঠদানের অনুমোদন পায়। ২০১৩ সালের ০১ নভেম্বর যশোরের শিক্ষাঙ্গনের বিশেষ ব্যক্তিত্ব জনাব সুলতান আহমদ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচিতি আরো ব্যাপকতা পায়। ঐ বছরই বিদ্যালয় ভবনের তৃতীয় তলার কাজ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব মোঃ মহিবুল হক মহোদয়ের সহযোগিতায় চতুর্থ তলার কাজ শুরু হয়। ডিজিটাল যশোরের কারিগর তৎকালীন জেলা প্রশাসক, জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মহোদয়ের সহযোগিতায় তখন থেকেই বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণিতে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠদান শুরু হয়। শ্রেণি সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিতে অতিরিক্ত শিক্ষকের প্রয়োজন হয়। মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান স্যারের প্রচেষ্টায় আরও কয়েকজন দক্ষ শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন । এতে বিদ্যালয়টি সুষ্ঠভাবে পরিচালনায় আরও গতি সঞ্চার হয়। ২০১৪ সালের শেষের দিকে নতুন জেলা প্রশাসক ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর মহোদয়ের আগমন ঘটে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের প্রতিষ্ঠানটির উপর সুনজর পড়ে । তিনি শুরুতেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন কীভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে যশোরের প্রথম সারির স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। তাঁর সাথে যুক্ত হন তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিনী জনাব রুনা লায়লা। সমন্বয়কারীর দায়িত্ব নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ পারভেজ হাসান। তাঁরাও স্কুলটি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তাঁদের নিয়মিত পদচারণায় স্কুলটিতে নতুন নতুন কার্যক্রম যেমন ঃ ‘বানান বন্ধু’ শিরোনামে বানান প্রতিযোগিতা, গার্লস গাইডস্, বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের করণীয় কী তা নিয়ে আলোচনা, ‘স্টুডেন্ট অব দি মান্থ’ ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী’র উপর ভিত্তি করে সিডি প্রকাশনা অনুষ্ঠান ইত্যাদি শুরু হয়। সাবেক জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় তলার পশ্চিম দিকে গড়ে তোলা হয় দৃষ্টি নন্দন একটি কম্পিউটার ল্যাব। যার নামকরণ করা হয় ‘ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর কম্পিউটার ল্যাব’। পাশাপাশি সরকারী অনুদানে গড়ে উঠে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’। উত্তরোত্তর প্রতিষ্ঠানটির সুনাম যশোরের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বছর শেষে প্রত্যেক অভিভাবকেরই আকাঙ্ক্ষা থাকে তার নিজ সন্তানটিকে যশোর কালেক্টরেট স্কুলে ভর্তি করানোর। প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র-ছাত্রী ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত শ্রেণি কক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অধ্যক্ষ জনাব সুলতান আহমদ ভাবতে থাকেন বিদ্যালয় ভবনের সম্প্রসারণ নিয়ে। সেই ভাবনা মাথায় নিয়ে ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ সন্ধ্যার পর তিনি উপস্থিত হন জেলা প্রশাসকের বাস ভবনে। ভাবনা একটাই-বিদ্যালয়ের জন্য আর একটি ভবন। সালাম ও কুশল বিনিময়ের পর তিনি তার ভাবনার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় অধ্যক্ষের নিকট শহরের দু’একজন দানশীল ব্যক্তির নাম জানতে চাইলেন। অধ্যক্ষ হৃদয়বান ব্যক্তি জনাব মোঃ আবু নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর নাম জেলা প্রশাসকের কাছে তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক মহোদয় মোবাইলের বাটন টিপতে লাগলেন। সংযোগ পেয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও নানা কথোপকথনের পর এক ফাঁকে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কথা তুলে ধরলেন। চিত্তবান ও বিত্তবান ব্যক্তি জনাব মোঃ আবু নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মুহুর্তের মধ্যে ৫০,০০,০০০/- (পঞ্চাশ লক্ষ) টাকা দানের প্রতিশ্রুতি দিলেন। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল ২০,০০,০০০/- (কুড়ি লক্ষ) টাকার প্রথম চেকটি তুলে দিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হাতে। তখন থেকেই যাত্রা শুরু করল বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ‘জাহানারা হুদা একাডেমিক ভবন’ নামে। ভবনটির কাজ সমাপ্ত করতে সর্বসাকুল্যে ব্যয় হবে ৩,০০,০০,০০০/- (তিন কোটি) টাকা। জনাব জাহেদী সাহেব হাসিমুখে প্রস্তাব গ্রহণ করলেন। সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক মহোদয় নিজে। গঠন করলেন ০৯ সদস্যের একটি উন্নয়ন উপ-কমিটি। ০৩ মে ২০১৫ তারিখে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের জন্য মাটিতে কোপ দিলেন জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং জনাব মোঃ আবু নাসের শাহরিয়ার জাহেদী সহ অনেকে। সেই ভিতের উপরই নির্মিত হলো আজকের এই ‘জাহানারা হুদা একাডেমিক ভবন’। যেটি ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে শুভ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর। শুধু তাই নয় প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জনাব জাহেদী সাহেব ‘নাহিদা আক্তার জাহেদী মেধা বৃত্তি’ চালু করলেন। ২০১৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আরোপ করার জন্য জেলা প্রশাসক ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব কে,এম, মামুন উজ্জামান’কে দায়িত্ব প্রদান করেন। তিনি বিদ্যালয়ের পাঠদানের প্রক্রিয়াতে পরিবর্তন এনে অতিরিক্ত সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ পাঠদানের ব্যবস্থা করেন। যার ফলে ২০১৭ সালের বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ঈর্ষনীয় ফলাফল অর্জিত হয়। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে নতুন অধ্যক্ষ মোঃ মোদাচ্ছের হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যালয়টিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। তিনি শিক্ষক, কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাকদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শিক্ষকদের শ্রেণি পাঠদানের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রতিমাসে একবার ‘ইন হাউজ ট্রেনিং’ চালু করেন। সাবেক জেলা প্রশাসক মহোদয় জনাব মোঃ আশরাফ উদ্দীন মহোদয়ের পরামর্শ ও নির্দেশনায় বিষয়ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের পাঠদানকে আরো গতিশীল করেন। লেখাপড়া পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যাতে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য নানামুখী সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম চালু করেন। অত্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা একাডেমিকে ফলাফলের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করে চলেছে। বিদ্যালয়ের কিছু অসামাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য ২০১৮ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল আউয়াল মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি দ্রত সাড়া দেন এবং তাহা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় জনাব মোঃ তমিজুল ইসলাম খান বিদ্যালয়টির সভাপতি পদের দায়িত্ব নেওয়ার পর উল্লেখযোগ্য কিছু সহশিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ এবং তাহা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জনাব শাম্মি আক্তার স্যারের সার্বিক তত্ত¡বধানে বিদ্যালয়ে একটি স্বয়ংসম্মুর্ণ “ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব” প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং বর্তমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জনাব জনাব মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন স্যারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সহশিক্ষা কার্যক্রমের উদ্যোগ হিসেবে বিদ্যালয়ে আর্ট ওয়ার্কসপ, IDEA ENGLISH SPOKEN GAME METHOD ওয়ার্কসপ, কারাতে প্রশিক্ষণ (মার্শাল আর্ট) ওয়ার্কসপ, সপ্তাহে একটি বই পড়ি শিরোনামে পাঠচক্র, সঙ্গীত শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ, শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধূলা বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে।
“এসো জ্ঞানের সন্ধানে, ফিরে যাও মানব কল্যাণে”- এ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে যশোর কালেক্টরেট স্কুল স্থাপন করেছিলেন। দেখতে দেখতে স্কুলটি এগার বছর কাল অতিক্রম করেছে। এ স্কুলটি যশোর জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত একটি স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান, লেখাপড়ার পাশাপাশি সকল সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অল্পদিনের মধ্যেই যশোরবাসীর নিকট একটি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ স্কুলে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সকলের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকলে অতি অল্প সময়ে যশোর কালেক্টরেট স্কুল যশোর সহ সারা দেশের মধ্যে একটি আদর্শ বিদ্যাপীঠে রূপ নেবে বলে আমরা আশাবাদী।